জীবন একটি বহতানদী। ছলছল টলমল ভরা নদীও একটি সময় শুকিয়ে যায়। মানব জীবনও নদীর মতো। এক জীবনে মানুষ কোথাওনা কোথাও এসে শূন্য হয়ে যায়, শূন্যতা মানুষের ভেতর একটি বসত গড়ে তুলে। এখনও মাকে নিয়েই আমার বসবাস। আমি মাকে নিয়েই আছি অথচ মা নেই। কোথাও মা আর নেই, কোত্থাওনা। আকাশ বাতাস সাগর পর্বত যখন যেখানে থাকি মাকে কোথাও আর পাওয়া যায়না, কিন্ত মানিত্য বসে থাকে আমার প্রাণের ভেতর। মাকে ছুঁতে পারিনা আর কখনো, অথচ মা নিয়ত ঘুরে বেড়ায় আমার চোখের সামনে।এই যে মা নেই অথচ মা আছে প্রতিটি কিছুতেই, এটিই শূন্যতা।এ শূন্যতা আর কখনো শেষ হবেনা! এই রকম শূন্যতা মানুষের জীবনে কেনো একটি সময়ে জীবনের তরে গেঁথে যায়, আমার যেমন এই জীবনে তেপ্পান্ন বৎসর বয়সে এসে ভরপুর জীবন নিমেষেই শূন্য হয়ে গেলো। মা আমার পুরো জীবন শূন্যতায় ভরিয়ে দিয়ে চিরতরে লুকিয়ে গেলো। এই শূন্য জীবন কেনোদিন কেনো কিছুরই বিনিময়ে পূর্ণ হবেনা আর। কখনোই ভাবতে পারতামনা মাকে ছাড়া থাকতে হবে, মাকে ছাড়া বাঁচতে হবে। যে দিন মা ম্যসিভ স্ট্রোক করে ফেলে, যে দিন মা ব্রেইন হেমারেজ হয়ে কোমায় চলে যায় সে দিন কেনো ভাবেই বুঝতে পারিনি এত বড় অন্ধকার নেমে আসবে জীবনে। সে দিন ছিলো বুধবার, তেইশ অক্টোবর ২০২৪। পৃথিবী আঁধার করে দিয়ে মা কোমায় চলে গেলো। এক টানা সাড়ে তিনটি বৎসর যেই মাকে বাচ্চার মতো বুকে আগলে রেখেছি সেই মা আমার চোখ বন্ধ করে ফেললো! এক জন মা পাগল সন্তানের জন্যে, এক জন মা পাগল কন্যার জন্যে কতটা বেদনার ছিলো সে ব্যাথা তা জানার কেউ ছিলোনা সেদিন। অথচ সাড়ে তিন টি বছর দিনে রাতে ঘুমহীন বিশ্রামহীন কাটাতাম আশংকায় যে, এই বুঝি মাকে হারিয়ে ফেললাম! চোখের সামনে ঘটে যাওয়া সেই ভয়ংকর কাঁপুনি (ডাক্তারের ভাষায় যাকে খিঁচুনি বলা হয়) যেন পুরো হাসপাতাল কাঁপছে, সেই আতংকের মতো ট্রমা হৃদয়ে জমে গেলো। ট্রমার মতো বয়ে বেড়াই এখন। সে ব্যাথা আর কখনো কোনদিন সেরে যাবেনা, সে দৃশ্য ভুলতে কেনো দিন পারবোনা।মা আমার কলিজার টুকরা, সবচেয়ে ভালোবাসার ধন আমার। সেই মূহুর্তে মা’র কতটা কষ্ট হয়েছিলো তা নিয়ে নিতে পারিনি, মাযের সে কষ্টের আর কোনো উপশন দিতে পারিনি আমি সেদিন। আমি শুধু অস্থির হয়ে ডাক্তার নার্সদের ডাক দিয়ে জড়ো করেছি, নিজে মা’র আক্সিজেন মেপে ছি মা বারে বারে পানি খেতে চয়েিেছলো তিন তিন বার মাকে পানি দিয়েছি, মাকে জড়েিয় ধরে রেখে মা’রকাঁপুনি থামানোর কি নিদারুণ চেষ্টা করেছি! ততক্ষণে মা নেতিয়ে যাচ্ছিল, মা আমার দিকে আমি মা’র দিকে অসহায় তাকিয়ে ছিলাম। সেই মূহুর্তেও মা আমার অস্থিরতা বুঝতে পেরে খুব জড়ানো কথায় বলেছিলো , ধৈর্য্য ধর । তারপর ত্ইো ইমা……। কেমন করে ভুলা যায় সেই মর্মান্তিক দৃশ্য! তারপর,সব চুকিয়ে মা কোমায়, মা ডাক্তারের হাতে বিশেষ পরিচর্যায় বিশেষ সেবায় চলে গেলো। আড়াই দিন আমার মা, আমার বাচ্চা, আমার বুক থেকে আলাদা হয়ে গেলো। সেই কষ্ট, সেই উদ্ভ্রান্ততা, সেই উদ্বিগ্ন তা আমার পুরো হৃদপিন্ডের গতি চলাচল যেন শীতল করে দিলো। বেদনায় ছেয়ে গেলো আমার পৃথিবী। তারপর, আড়াই দিনের অভিমান ঝেড়ে কোমা থেকে মাচির মুক্তি নিলো। আমার হাত ধরে শেষ নি:শ্বাসটুকু হাওয়ায় মিলিয়ে দিয়ে, আমাকে একা শূন্য করে মা চলে গেলো চিরদিনের তরে। সেদিন ছিলো ছাব্বিশ অক্টোবর রবিবার সময় বিকেল তিনটা। পুরো পৃথিবী যেন চিৎকার দিয়ে গেলো, আমার পৃথিবী যেন ভেঙ্গে পড়লো। আমি জানলাম,আমি মানলাম নিঠুর এই সত্য। আমার হৃদয় কাঁদলো পাথরের মতো। মা অনন্তে চলে গেলো, বুকের মধ্যে বসে গেলো চির জীবনের কান্না। আমি কাঁদলাম। কঁচি বেলা থেকেই মাকে অনেক ভালোবাসতাম।মা’রপ্রতি কেউ অবিচার করবে, মাকে কেউ অবমূল্যায়ন করবে, মাকে কেউ কষ্ট দেবে সেই সব একদম মানতে পারতামনা কখনো। মাকে সবসময় সুখ দেবার, মা’র কষ্ট লাঘব করবার, মাকে যে খুব ভালোবাসি তা প্রকাশ করবার চেষ্টা করতাম খুব। মা’র প্রতি প্রখর অনুভব ছিলো আমার। সবসময়ই মা’র প্রতি বিশেষ একটা টান, একেবারে সবার থেকে আলাদা একটা টান একটা গভীর মায়াঅনুভব করতাম। মাও হয়তো একটু বিশেষ ভালোবাসতো আমায়, প্রাণের গভীরে আমার এটিই মনেহতো! মাকে আমি শৈশব থেকেই খুব ভালোবাসতাম, ভালোবাসার পরিমাণ জানতামনা শুধু। কিন্ত আজ ভাবি, আমি মাকে এতটা ভালোবাসতাম!! এখন কেউ জিজ্ঞেস করলে আমি অনায়াসেই বলে দিতে পারি, আমি মাকে আকাশের মতো ভালোবাসি, এ ভালোবাসা অসীম। কখনো ভাবিইনি যে মা’র জন্যে জীবনের সবকিছু থামিয়ে দেবো ,কখনোই ভাবিনাই যে মা’র জন্যে পৃথিবীর সব ছেড়ে দেবো। কখনো ভাবতেও পারিনি যে আমি মাকে এত ভালোবাসি!! হ্যাঁ মাকে ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি। সুখের সাগরে ভেসে ভেসে নি:স্ব হয়ে ভালোবেসেছি আমি মাকে। ধন্য আমারজীবন! পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াও হঠাৎ সিদ্ধান্তে ভালো কিছু হয়, আমার জীবনে তাহাই অলৌকিক ঘটেছে। তা যদি না হয় তবে কেনইবা হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে ০২ মার্চ ২০২১ দেশে ফেরা হয় আমার, তাও আবার একটু বেশি সময় নিয়ে, মাকে নিয়ে তুমুল ঘুরে বেড়াবো তাই। সে বার যখন ডালাস ইউএস্এ বাসা থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি ঠিক তখন ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিই। স্ট্যাটাসটি ছিলো এ রকম – Jipsy has no boundaries, Traveler has no limited path. But a lover, a patriot has special love, special voices has special thoughts. Have a dream, have a magnetic touch of compass, have a big journey. I’m goanna missing and leaving. Just step forward from here on the way to my dreamland. May be some blessing day waiting for me here or there. I hope. Bye everybody. হ্য্যঁ আমার জন্যে ভালো কিছু অপেক্ষায় ছিলো, সে আমার মা। আমার সৌভাগ্য যে, অসম্ভব রকমের ভালো কিছু আমাকে চুম্বকের মতো টেনে নিয়ে এসেছিলো স্বদেশে, মায়ের কাছে। স্বদেশ এবং মা আমার কাছে অভিন্নসত্তা। আজ আমার জীবনে দু’টোরই অভাব। খুব মনের তৃপ্তি নিয়ে ভাবি, যদি পাগলের মতো সেদিন দেশে না ফিরতাম অথবা কোনো মোহ মায়া যদি আমাকে গ্রাস করে ফেলতো তবে হয়তো অন্য কোনো ঘটঁনা-দূর্ঘটনা ঘটতে পারতো। সৃষ্টিকর্তা সহায় তিনি ভালোবে সে মা’র জন্যে তাঁর ক্ষুদে সন্তানকে ভাসিয়ে নিয়ে এসেছিলো। সেই থেকে শুরু হলো মা এবং আমার জন্যে এক নুতন ও কঠিন জীবনের। জুলাইতে ডাক্তার মাকে জরুরী ঘোষণা দিয়ে ডায়ালাইসিসে নিয়ে গেলো। সেদিনই নিজে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিই মাকে রেখে আমার পক্ষে কোথাও যাওয়া সম্ভব না, আমি আমেরিকায় যাবোনা। আমার কলিজার টুকরা মায়ের থেকে আমেরিকা কখনোই বড় কিছু নয়, আমার কাছে। আমেরিকারডলারঐশ্বর্য বিত্তআমাকেটানেনি, মাআমাকেমমতায়নিবিড়বন্ধনে টেনেরাখলোএভাবে। মাকে বুকে তুেেল নিলাম। সুখের জীবন শুরু হলো মা মেয়ের। মায়ের হাতের পরশ মায়ের ভালোবাসা আমার মাথায়, হাতে, চোখে মুখে আর আমি আমার যত ভালোবাসা আছে সবটুকু দিয়ে বুকে বেঁধে রাখি প্রাণ পনে আগলে রাখি মাকে। এভাবে জুলাই ২০২১ শুরু হলো মায়ের নুতন জীবন, ডায়ালাইসিস জীবন। শুরুতেই মা ভীষণ রকম খারাপের দিকে চলে গেলো।আমি তখনো বুঝতে পারিনি ডায়ালাইসিস কি ডায়ালাইিিসস কাহাকে বলে, এ বিষয়ে জ্ঞান একে বারেই জিরো। ডায়ালাইিিসস শুরু হতেই মা সম্পূর্ণভাবে চরম ডিমেন শিয়ায় চলে গেলো।মা খায়না, মা আমাদের কাউকে চিনতে পারেনা। মা’র কোন কিছুই মনে নেই। মা যখন কোন কিছুই বুঝতনা, মাকে যখন খাওয়াতে পারতামনা, এমনকি এমনও দিন গেছে সকাল থেকে সন্ধ্যা অব্ধি মা কিছুই খেলনা তখন মনে হতো, কি করবো আমি! আমার প্রাণটিই যেন চলে যায়!! দিন রাত বুঝিনি, চন্দ্র-সূর্য দেখিনি, কোনো রাতেই তেমন ঘুমাইনি।সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে মাকে জাগিয়ে তুলতে হবে,সুস্থ করে তুলতে হবে বাঁচাতে হবে মাকে তাই জীবনে ভালোবাসার পণ করে নিলাম। চরম অসুস্থ মাকে বুকে জড়িয়ে ধরে যখন সারাটি রাত জেগে থাকতাম মনে হতো, নয়টি সন্তানের জন্যে মা কত রাত জেগেছে, কতটা কষ্ট পয়েছে! মা’র জন্য খুব মায়া হতো আমার, মাকে চুমায় চুমায় ভরিয়ে দিয়ে বলতাম ’ তোমাকে খুব ভালোবাসি মা’। আহারে মা তো কিছুই বুঝেনা আমার এ ভালোবাসা! খুব আতংকে থাকতাম,ভয়ে থাকতাম এই বুঝি মাকে হারালাম। প্রায় আট মাস কি নয় মাস এরকম ভাবে কেটে গেছে। তার পর হঠাৎ এক দিন মা বললো, ’আমি দাঁড়াবো, আমি টেবিলে বসে খাবো। ’আমিতো আকাশ হাতে পেলাম যেন। মেঝ আপার ঢাকার বাসায় মাকে নিয়ে থাকতাম,আমি মেঝ আপাকে ডাক দিলাম। মাকে দাঁড় করালাম, মা দাঁড়ালো। মাকে টেবিলে নিয়ে গেলাম মা টেবিলেবসে খেলো। নয়টি মাস পরে মা এভাবে ধীরে ধীরে অনেক টুকু ফিরে এলো। তার পরের দেড় বৎসর চিকিৎসা, সেবা, যত্নে মা মুটামুটি হাসি খুশিতে অনেক টুকু ভালো ছিলো। কিন্তু, ডায়ালাইসিস তো ক্রমাগত চলছে। সেই কষ্টের সাথে মা যুদ্ধ করে গেছে। তার পরবর্তী সময় গুলো ধীরে ধীরে আবারো অনেক গুলো কষ্টের মধ্যে দিয়ে মাকে বেঁচে থাকতে হয়েছে। একাধিক বার সার্জারীতে যেতে হয়েছে ওটির দরজায়! শেষের এক বৎসর মা বহু শারিরীকসমস্যার মধ্যে দিয়ে গেছে। মা’র জন্যে পুরো পৃথিবী ছেড়ে দিয়েছিলাম, আমার অন্য কোন জগত ছিলোনা। মা ই ছিলো আমার সুখের জগত। মা মেয়ের দিন বেশ ভালোই ছিলো। আমার মা ছিলো আমার ছোট্ট বাবু বাচ্চা আমি ছিলাম মা। ক্রমে মা ধীরে ধীরে খারাপের দিকে চলে যায়। মা চলে যাওয়ার পূর্বের তিন টি মাস তেমন কথাই বলতোনা, মা’র উদাস দু’ চোখ দূরে তাকিয়ে থাকতো, আমার চোখের দিকে নির্বাক তাকিয়ে থাকতো। হাসি খুশি মানুষটি আর হাসতোনা! সারাটি দিন মাকে চুমা দিতাম, মাকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকতাম। মা তার সংসার খোঁজেতো, মায়ের উদাস দু’ চোখ তার সব সন্তানদের উপস্থিতি খোঁজে বেড়াতো! মা তার নাতি-নাতনীদের খোঁজ করতো!! পাড়া প্রতিবেশিদের কথা বলতো!! কিন্তু এ দুনিয়ার সবাই ব্যস্ত ছিলো। মা’র কথা কারোই মনে হতোনা, মা’র আদর ভালোবাসার কথা মনে করেও মাকে কারোই দেখার সাধ জাগেনি কোনোদিন। হায়রে মানুষ!! নিষ্ঠুর পৃথিবী কে দেখে গেছি সাড়ে তিনটি বৎসর। নিভৃত কষ্টে ধীরে ধীরে মা’র দু ’চোখে বিষন্নতা জমেছিলো, কথা হাসি সব চুপ হয়ে গিয়েছিলো। আমার পরান পাখি মাকে আদর করে জড়িয়ে ধরে চুমা দিয়ে বলতাম – ’ময়না সোনা মা মানি কেন এত মনখারাপ করছো মা, এই যে আমি তোমাকে ভালোবাসি এই যে আমি তোমার জন্যে পুরো পৃথিবী ছেড়ে দিয়েছি এই সুখ টুকু তুমি মনের মধ্যে নাও মা !’ মা আমার চুলে হাত বুলিয়ে আদর করতে করতে বলতো , ’আমার নয়টা সন্তান তুই একা কি করে নয় জনের ভালোবাসা আদর দিবি, নয় জনের নয়টি আদর নয় রকম ! ’সত্যিই তো, মার কথাই সত্যি। হায়রে মা! আমার মা ’র নয়টা সন্তানের শরীরের গন্ধ মুখসÍছিলো, মা না দেখেই বলতে পারতো কোন সন্তান এসেছে! খুব ঘর-সংসার সন্তান পাগল ছিলো মা আমার । খুব বেশি সন্তান আর ঘর সংসার ভালোবাসতো। কিন্ত হায় মায়ের প্রতি সন্তানদের সেই দরদ কোথায়!! নিষ্ঠুর পৃথিবীর নিঠুর সন্তানেরা।মা বুঝে গেলো কেউ মাকে দেখতে আসবেনা, অনেক দিন অনেক কষ্ট পেরিয়েও মা সবার জন্যে অপেক্ষা করেছে, অনেক সময় দিয়েছে সবাইকে। কেউ আসেনি। মা আর কারো কথা ভাববেনা, কোনো অপেক্ষা কারো জন্যে করবেনা আর, তাই খুব অভিমান বুকে নিয়ে চলে গেলো মা। মা আমার এত ভালোবাসার প্রয়োজনও আর মনে করেনি! সাড়ে তিন বৎসরের ডায়ালাইসিসের কষ্ট মনের বেদনা কে ছুটি দিয়ে আমার আদরের ময়না পাখি উড়ে গেলো আমাকে একা রেখে। আর কোন সেবা দিয়ে কোন ভালোবাসা দিয়েই মাকে বাঁচাতে পারিনি।কথা ছিলো সাথে নিয়ে যাবে আমায়, সেই তো ভালোহতো। জীবন এখন ভরা বাদর। বাবা চলে গেছে দেখিনি। বাবা কাউকে না বলে হঠাৎ প্রস্থান। মনের মধ্যে বাবাকে না পাওয়া আর বাবাকে না দেখার কষ্ট বিঁধেছিলো বুকে। কিন্তু, আমার সাত রাজার ধন হয়ে মা তো ছিলো, পৃথিবী আলোকিত ছিলো। মা যখন চলে গেলো পৃথিবী আঁধার হয়ে গেলো।আজ আমি শূন্য। মাকে আদর করতে পারিনা, মাকে চুমা দিতে পারিনা, মাকে ছুঁতে পারিনা, মাকে জড়িয়ে ধরতে পারিনা, মাকে আর কোত্থাও পাইনা এই দু:খ আজ জীবন ঘিরে। মা হীন জীবন শূন্য। এই শূন্যতার আর কোনো শেষ নেই। সন্তানরা চাইলেই পারে মা-বাবা কে প্রাণ ভরে ভালোবাসতে, আমি সন্তান তো পেরেছি! সন্তানরা চায়না বলেই পারেনা। সন্তানরা ভীষণ স্বার্থপর, কঠিন স্বার্থপর। সন্তানরা জানেনা মা-বাবা কে ভালোবাসতে পারার সুখ কি! আমি জানি সে সুখের ইতিকথা, সে সুখের উৎসারিত ঝর্ণ ধারার কথা। আমার মতো করে ভালোবাসতে হবে এমনটি না! কিন্তু,দায়িত্ব বোধের জায়গা থেকে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই করুক, এইটুকু প্রত্যাশা মা-বাবা তো করতেই পারে। একজন মায়ের কথা যদি বলি, পৃথিবীতে একজন মা সন্তানের ভালোবাসা ছাড়া কিছুই চায়না। সে টুকুই অধিকাংশ সন্তানেরা দিতে চায়না বিশেষ করে তথাকথিত শিক্ষিত সমাজে! চরম স্বার্থপর!! ধিক্কার জানাই আমি। মা-বাবা কে ভালোবাসার সংস্কৃতি, মা-বাবাকে ভালোবেসে সুখী হওয়ার সংস্কৃতি তৈরী হোক আমাদের জন্ম জন্মান্তর, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রত্যাশা। মায়ের শূন্যতা যেমন আমাকে ঘিরে থাকে তেমনি মাকে পাগলের মতো ভালোবাসার সুখও আমাকে সুখী করে তুলে, আপ্লত করে রাখে। এই সুখের সীমা পরিসীমা নেই, অপার। মাকে অনেক কিছুই করতে পারিনি এরকম আফসোস আমার নেই। জীবনে সর্বোচ্চ যতটুকু ছিলো সবটুকু দিয়ে মা’র পাশে ছিলাম জীবন থেকে কবর পর্যন্ত। তবু, এক মুঠো কষ্ট মনে রয়ে যায় যখন ভাবি, আমেরিকা থেকে পাগলের মতো ছুটে এসেছিলাম মাকে নিয়ে তাজমহল দেখতে যাবো বলে, মা তাজমহল দেখতে চেয়েছিলো। এসিেছলাম চা বাগানের মাঝে খুব সুন্দর রিসোর্টে মাকে নিয়ে ক’টা দিন কাটাবো, মা সুন্দর সুন্দর স্থানে বেড়াতে পছন্দ করতো। মাকে নিয়ে বেড়ানো আর হয়নি। মা’র অসুস্থতা সবটুকু উচ্ছ্বাস পরিকল্পনা ম্লান করে দিয়েছিলো। অন্যতায় কোনো আফসোস নেই। গভীর সুখ অনুভব করি যখন ভাবি শেষ পর্যন্তও মায়ের সাথেই ছিলাম। পৃথিবীতে একজন মা সন্তানের ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই চায়না, আমি আমার মা’র কাছে তাই জেনেছি। মা’র কথা মনে করতেই চোখে জল আসে, শূন্য লাগে সব, অর্থহীন মনে হয় এখন সবকিছু। মা আমার সুখ পাখি। আজ আমি মাকে ডাকি সারাদিন, মা আর আসেনা। মা আমাকে একা রেখে লুকিয়ে গেছে, বলেছিলো সাথে নিয়ে যাবে। কিন্তু একা রেখে চলে গেছে মা। মা নেই অথচ মা আমার প্রতি মুহুর্তের কাজে, ভাবনায়, টুকরো টুকরো না পাওয়ার বেদনায়, অনেক অনেক মধুর স্মৃতিতে স্পর্শে বসে আছে আমার হৃদমাঝারে। মাকে ভীষণ ভালোবাসি। মাকে নিয়েই আজও বাঁচি।
সাবিনা ইয়াসমিন
সংগীত শিল্পী, কবি ও
নিয়মিত লেখকঃ আলোকিত চকরিয় ডট.কম
