ঢাকাসোমবার , ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শামুকের গতিতে বাড়ছে সাক্ষরতার হার ?

তাসনীম হাসান। পূর্বকোণ
সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫ ১১:২১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

দেশে বড় বড় সেতু হচ্ছে। টানেল, এক্সপ্রেসওয়েও এখন বাস্তব। ডিজিটাল যাত্রা-তা তো শুরু হয়েছ বহু আগে। এত এত উন্নয়নের আলোর ভিড়ে অক্ষর শেখার আলোটাই কিনা ছড়াচ্ছে ধীরে ধীরে। সবমিলিয়ে উন্নয়নের চাকায় গতি থাকলেও অক্ষরজ্ঞান বাড়ার গতি এতটাই মন্থর-যেন শামুকের পায়ের টেনে টেনে হেঁটে চলা। কেননা, গত পাঁচ বছরে সাক্ষরতার হার বেড়েছে মাত্র-২ দশমিক ৩ শতাংশ। বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকা, দ্বীপাঞ্চল ও নগরের বস্তিগুলো এখনো ‘সাক্ষরতা-অন্ধকারে’ ঢাকা। অথচ এই দশকটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত আট বছরের নানা প্রক্রিয়া ও একাধিক মূল্যায়ন শেষে ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের চূড়ান্ত মর্যাদা পাবে বাংলাদেশ। কিন্তু সেই দশকেই কিনা সাক্ষরতার হার বাড়ার গতি সবচেয়ে ধীর। সাক্ষরতার হার বাড়ছে শামুকের গতিতে: ২০২০ সালে দেশে সাক্ষরতার হার ছিল ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২১ সালেও সেটি কোনো হেরফের হয়নি। এর মধ্যে ২০২২ সালে এসে উল্টো প্রায় ১ শতাংশ কমে যায় সাক্ষরতার হার। ওই বছর সাক্ষরতার হার ছিল-৭৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। পরের বছরে এসে অবশ্য বাড়তে শুরু করে সাক্ষরতার হার, ওই বছরে ছিল ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০২৪ সালে সাক্ষরতার হার ১ শতাংশের ওপরে বেড়ে দাড়ায় ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশ। এরপর আবারও স্থির হয়ে আছে একই জায়গায়। আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসকে সামনে রেখে গতকাল রাজধানীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার জানিয়েছেন দেশে সাক্ষরতার হার ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ সাক্ষরতার হার আগের বছরেই জায়গায় রয়ে গেছে। উপদেষ্টা এই হার নিয়েও শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘সত্যিকার অর্থে সাক্ষরতার হার আরও কম হতে পারে। কেননা আগের সরকার প্রকৃত সাক্ষরতার হার চেপে রেখেছে। এই দশকে সাক্ষরতার হার বাড়ার প্রবণতা কিছুটা ধীর হলেও অবশ্য আগের দশগুলোতে বেড়েছে তুলনামূলক বেশি। আগের দশকে অর্থাৎ ২০১১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত হিসেব করলে-এই সময়ে সাক্ষরতার হার বেড়েছে ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ। এর আগের দশকে ২০০১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সাক্ষরতার হার বেড়েছিল ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ। ১৯৯১-২০০১ দশক হিসেব করলেও সাক্ষরতার হার বেড়েছিল ১০ শতাংশের বেশি-১২ দশমিক ৬ শতাংশ। এর আগে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর দেশে সাক্ষরতার হার ছিল ১৬.৮ শতাংশ। ১৯৭৪ সালে সাক্ষরতার হার দাঁড়ায় ২৫.৯ শতাংশে। যা পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে গিয়ে দাঁড়ায় ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশে। অর্থাৎ অতীতে বেড়েছিল বেশ ভালো গতিতে। কিন্তু ২০২০ সালের পর যে ধীরগতিতে বাড়ছে ২০৩০ সালে গিয়ে দশ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে কিনা সেই শঙ্কা রয়ে যায়। সাক্ষরতার হার বাড়ানোর জন্য দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা চালুর পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক তত্ত্বাবধায় সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘শুধু উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তের জন্য নয়। নিম্নবিত্তের জন্যও শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এটি করতে হলে-দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা চালুর বিকল্প নেই। তবে সারাবছরে সাক্ষরতার হার বাড়াতে তেমন কোন উদ্যোগ দেখা যায় না প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাব্যুরোগুলোর। সাক্ষরতা দিবস-এলেই যেন নড়েচড়ে বসে সংস্থাগুলো। এবারও সাক্ষরতার হার নানা উদ্যোগের কথা জানিয়েছে সরকার। সাক্ষরতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন জানিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, ‘দেশের ১৫০টি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সেপ্টেম্বরের শেষ বা অক্টোবর মাস থেকে ‘মিড ডে মিল’ চালু করা হবে। মিলের মধ্যে ডিম, মৌসুমি ফল, বিস্কুট, দুধসহ ৫ ধরনের খাবার থাকবে।’ এখন দেখার বিষয় সেই উদ্যোগ কতটা বাস্তবায়ন হয়। আর বাস্তবায়ন হলে কতটা বাড়ে সাক্ষরতার হার! ##

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।