ঢাকামঙ্গলবার , ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলায় সমাধানের কি পথ ?

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি-
সেপ্টেম্বর ২, ২০২৫ ১১:৩১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

**  চবি’র  সবুজ ক্যাম্পাসে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘাতের ঘটনা নিয়মিতই ঘটে। তবে কয়েকবছর ধরে স্থানীয় জনতা ও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষও এই ক্যাম্পাসের নতুন সমস্যায় পরিণত হয়েছে। শুধু গত পাঁচ বছরেই অন্তত ২০ বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে উভয়পক্ষ। দেড় দশক আগে স্থানীয়দের হামলায় এক ছাত্র প্রাণও হারিয়েছিলেন। প্রশ্ন হচ্ছে বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি কেন ঘটছে? সংঘর্ষের মূল শেকড় কোথায়? সমাধানের পথই বা কী? সাম্প্রতিক ঘটনার পর সেই উত্তর খোঁজা হচ্ছে নতুন করে। ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের তিন পাশে যেমন ভারত, তেমনি চবির তিন পাশে ঘিরে আছে জোবরা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থীদের জীবনযাপনের বিভিন্ন দিক- যাতায়াত, খাবার, বাজার, এমনকি আবাসন সবকিছুতেই স্থানীয়দের ওপর নির্ভরতা তৈরি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর-বাইরের এই নির্ভরশীল সম্পর্কই অনেক সময় দ্বন্দ্বে রূপ নেয়। বিশেষ করে চাহিদার সুযোগ নিয়ে স্থানীয় হওয়ার প্রভাব দেখিয়ে অনেকে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত মুনাফা করতে চান। শিক্ষার্থীরা এসব অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তুললে শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তোলেন। আবার শিক্ষার্থীদের অনেকেও গায়ে পড়ে দ্বন্দ্বে জড়ান। সর্বশেষ গত শনিবার ও রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় শিক্ষার্থী-স্থানীয় জনতা সংঘাতের ঘটনা ঘটলো। এতে কয়েকশ ছাত্র যেমন আহত হয়েছেন, তেমনি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন স্থানীয়রাও। বিশিষ্টজনেরা বলছেন, বিশ^বিদ্যালয় আর জোবরা গ্রাম একে অপরের পরিপূরক। একটিকে অগ্রাহ্য করে আরেকটি চলতে পারবে না। সেজন্য দু’পক্ষেরই দ্রুতই ‘মধুরেণ সমাপয়েৎ’-এ যাওয়া উচিত। কেন বারবার সংঘাত: পরিবহন নিয়ন্ত্রণ, ব্যবসায়িক টানাপোড়েন, সাংস্কৃতিক দূরত্ব, আইন প্রয়োগে অনীহা, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের দুর্বলতা, স্থানীয় রাজনৈতিক শক্তির মাথাচাড়া শিক্ষার্থী-স্থানীয় সংঘাতের প্রধান কারণ। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে যাওয়া-আসার প্রধান মাধ্যম শাটল ট্রেন। এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ওপরও নির্ভরশীল। এসব গাড়ি চালানোর সঙ্গে যুক্তরা বেশিরভাগই স্থানীয়। ভাড়া নির্ধারণে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকদের নিয়মিত বিরোধ দেখা দেয়। সামান্য কথাকাটাকাটিই অনেক সময় সংঘর্ষের সূচনা করে। শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন কেনাকাটা, খাবার- প্রায় সবকিছুই আসে স্থানীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে। এই বাজার নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবসায় আধিপত্যের প্রশ্নে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা যেমন আছে, তেমনি ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রভাব বিস্তারও সমস্যা তৈরি করে। স্থানীয়রা মনে করেন, শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর চাপ তৈরি করে; আবার ছাত্ররা অভিযোগ করেন, স্থানীয়রা অযৌক্তিক ভাড়া বা দাম চাপিয়ে দেন। বাংলাদেশের নানা অঞ্চল থেকে আসা শিক্ষার্থীরা হল ও ক্যাম্পাসের আশপাশের কটেজ-বাসাভাড়ায় ভিন্ন জীবনধারা নিয়ে বসবাস করে। তাদের পোশাক, আচার-আচরণ বা রাত্রিবেলায়ও চলাফেরা অনেক সময় স্থানীয় সমাজের চোখে অশোভন মনে হয়। আবার শিক্ষার্থীরা স্থানীয়দের আচরণকে ‘সংকীর্ণ মানসিকতা’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। এই পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝি সামান্য ঘটনারও বিস্ফোরণ ঘটায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি দেশের অন্যান্য ক্যাম্পাসের মতো এখানেও প্রভাবশালী। একইসঙ্গে স্থানীয় রাজনীতিও এখানে সক্রিয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিরোধ গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে, আবার স্থানীয় রাজনৈতিক দ্বন্দ্বও ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার স্বার্থে উভয়পক্ষকেই ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি সংঘর্ষের পর প্রশাসনিক বৈঠক, তদন্ত কমিটি ও মামলার ঘোষণা হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিচার ঝুলে থাকে। দোষীরা শাস্তি না পেয়ে নতুন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ দায় প্রশাসন যেমন এড়াতে পারে না, তেমনি স্থানীয় প্রশাসনের গড়িমসিও এখানে বড় কারণ। সমাধানের পথ কোথায়: বিশ^বিদ্যালয়ের বর্তমান-সাবেক শিক্ষকেরা বলছেন, এটা মূলত সহাবস্থানের সংকট। শিক্ষার্থী-স্থানীয় অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নিয়ন্ত্রণের দ্বন্দ্বও আছে। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ার সংস্কৃতিও এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তির মূল উৎস। তবে দু’পক্ষের মধ্যে নিয়মিত সংলাপ হলে এসব ঘটনা এড়ানো সম্ভব। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. সিদ্দিক আহমেদ চৌধুরী দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, আমাদের সময়েও শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটতো। তবে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে দু’পক্ষের সঙ্গে বসে সমাধান করে নিতাম। কখনও এমন বিরাট আকার ধারণ করেনি। কেন এমন হলো, কারও উস্কানি আছে কিনা, রাজনৈতিক শক্তির ইন্ধন রয়েছে কিনা- এসব খুঁজে বের করতে হবে। এই প্রবীণ অধ্যাপক আরও বলেন, জোবরা গ্রামের অনেকেই জমিজমা দিয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। তাদের অভিযোগ-অনুযোগও শুনতে হবে। তবে তারা যা চাইবে তা তো দেওয়া সম্ভব না। দু’পক্ষের মধ্যে নিয়মিত আলাপ-আলোচনা জারি রাখতে হবে, যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়। ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও জোবরার বাসিন্দা আবদুল কাদেরও একই কথা বলেছেন। তিনি দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, আমরা চাই সহাবস্থান। সেজন্য সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত জড়িত, সেটা ছাত্র হোক কিংবা স্থানীয় বাসিন্দা হোক, শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে আমাদের এমন ঘটনা দেখতে না হয়। এরইমধ্যে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিনকে প্রধান করে ২১ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সাধারণ শিক্ষার্থী আর স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন, সেই কমিটি ঘটনার আসল কারণ জানাবে, উস্কানিদাতাদের নামও বের করে আনবে। কেননা সেটি যদি সম্ভব না হয়, তাহলে আবারও দেখতে হতে পারে এমন সংঘাত!!

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।